দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানি বিল পরিশোধের ফলে এই পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আকুর বিল পরিশোধ করতে ১৭৫ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করা রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯৭৫ কোটি ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এর আগেও, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে আকুর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৬৭ কোটি ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) হলো এশিয়ার ৯টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর আওতায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রতি দুই মাস পরপর আমদানি বিল নিষ্পত্তি করা হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।
বাংলাদেশ আমদানির জন্য আকুর মাধ্যমে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করে থাকে। অন্যদিকে, আকুর কিছু দেশ—বিশেষ করে ভারত—আমদানির চেয়ে রপ্তানি থেকে বেশি আয় করে। ফলে, বেশিরভাগ দেশকে আমদানির জন্য বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়, যা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ হলো আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি আয়ে ধীরগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা। বিশেষ করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাংলাদেশে খাদ্য, জ্বালানি ও শিল্প কাঁচামালের আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি, চলতি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধও রিজার্ভ হ্রাসের একটি বড় কারণ।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, রিজার্ভ আরও কমলে আমদানি ব্যয় পরিশোধে সমস্যা হতে পারে এবং টাকার মান আরও অবনতি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা চালু করেছে এবং রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়িয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে হবে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।