দীর্ঘ ১০ মাস পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৯.২৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগে, গত বছরের মার্চে এই হার ছিল ৮.৮৭ শতাংশ। এরপর একটানা ১০ মাস এটি দুই অঙ্কে ছিল, যা সীমিত আয়ের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি, চালের বাজার স্থিতিশীল থাকা এবং আমদানি সহজ করার নীতির কারণে খাদ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া, সরকার আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭২ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে ৯.২৪ শতাংশে এসেছে। যদিও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯.৩৮ শতাংশ হয়েছে, যা আগে ৯.৩২ শতাংশ ছিল।
মূল্যস্ফীতি এক ধরনের অদৃশ্য করের মতো কাজ করে। যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে কিন্তু মানুষের আয় সে অনুযায়ী না বাড়ে, তখন সংসার চালাতে ঋণ নিতে হয় বা খরচ কমাতে হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদিও মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, তবুও প্রকৃত আয় না বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এখনো চাপের মধ্যে আছে।
একজন ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১০০ টাকায় যে পণ্য ও সেবা পাওয়া যেত, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার জন্য ১০৯.৩২ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। অর্থাৎ, জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধি, শুল্ক হ্রাস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে, তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের ওপর শুল্ক কমানোর ফলে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি আরও কমিয়ে আনার জন্য টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাতের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে। না হলে, ভবিষ্যতে আবারও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কমলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে কতটা টেকসই হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ওপর। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও আমদানি খরচ বেড়ে গেলে বাজার আবার চাপে পড়তে পারে।
সরকার বলছে, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তবে বাস্তবতা হলো, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এখনো পুরোপুরি স্বস্তি পায়নি, বরং তারা আশায় আছে যে, ভবিষ্যতে খাদ্যের দাম আরও সহনীয় হবে।